মানুষের মস্তিষ্কে বহিরাগত স্মৃতি প্রবেশ করানোর কৌশল উদ্ভাবিত



জাপানের গবেষকরা এমন একটি কৌশল উদ্ভাবন করেছে যার সাহায্যে এখন মানুষের মস্তিষ্কে মিথ্যা তথ্য বা ভুল স্মৃতি প্রবেশ করানো সম্ভব হবে। এটি এমনকি ব্যক্তির চিন্তাধারা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের ধারাকে পালটে ফেলতে পারবে। ‘কারেন্ট বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ এমন বাস্তবতার কথাই জানান দিচ্ছে। এই নিবন্ধে গবেষকদল বিবরণ দিয়েছেন কীভাবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ব্যক্তি বুঝতেই পারবে না কোনটি তার নতুন স্মৃতি আর কোনটি তার অভিজ্ঞতালব্ধ পুরাতন স্মৃতি। কীভাবে ব্যক্তির অনুভূতিকে জানতে না দিয়েই এমনটা করা সম্ভব, তার বিবরণ দেয়া হয়েছে ঐ নিবন্ধে।

মস্তিষ্কে নতুন করে বহিরাগত স্মৃতি, ঘটনা ও অভিজ্ঞতা প্রবেশ করাতে পারলে সেটি হবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য বড় এক মাইলফলক। এর মাধ্যমে খুলে যেতে পারে চিকিৎসার অনন্য এক পথ। যেমন অলঝেইমার নামক মারাত্মক মানসিক রোগের জন্য চমৎকার এক ট্রিটমেন্ট হতে পারে এই পদ্ধতি। তাছাড়াও কগনেটিভ ডিজঅর্ডার, ডিপ্রেশন ও অটিজমের চিকিৎসায় এটি হতে পারে চমৎকার এক উপায়। এমন সম্ভাবনার কথাই জানিয়েছেন এই গবেষণার প্রধান ‘তাকিও ওয়াতানাবে’। শুধু তাই নয়, রোগী ও পরিস্থিতি যদি অনুকূলে থাকে তাহলে মস্তিষ্ক থেকে কিছু স্মৃতি বা অভিজ্ঞতা মুছেও ফেলা যাবে। যেমন কারো জীবনে ঘটে যাওয়া মারাত্মক কোনো ঘটনা তার পরবর্তী জীবনকে বরবাদ করে দিতে পারে। এমন ক্রান্তি অবস্থানে চলে এলে মস্তিষ্ক থেকে এই স্মৃতি মুছে ফেলা সম্ভব। নাজুক ও নেতিবাচক স্মৃতি কমে গেলে সেটি মানসিক ডিজঅর্ডার থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনতে পারে।

এই পরীক্ষার একদম শুরুর দিকে গবেষকরা ব্যক্তির মস্তিষ্কে দৃশ্যগত সামান্য বিকৃতি এনে দেন। মস্তিষ্কের যে অঞ্চলে রঙ সংক্রান্ত অনুভূতি নিয়ে কার্যক্রম চলে সে অঞ্চলে এমন কিছু করা হয় যার মাধ্যমে ব্যক্তি কালো জিনিসকে লাল হিসেবে দেখার জন্য নির্দেশিত হয়। পরে তাদেরকে কিছু রঙ সনাক্ত করতে বলা হয়। সনাক্তকরণের সময়ে তাদের মস্তিষ্কের সকল কার্যক্রম fMRI মেশিন দিয়ে স্ক্যান করা হয়। এবং এই স্ক্যানে ইতিবাচক সারা পাওয়া যায়। স্ক্যানে দেখা যায় মস্তিষ্কের যে অঞ্চল লাল রঙের জন্য সাড়া দেয় সেই অঞ্চল উদ্দীপিত হচ্ছে।

অনেকটা সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্র ‘ম্যাট্রিক্স’-এর কল্পনার মতো শোনাচ্ছে। বাস্তব জগতে কী হবে না হবে, কী দেখা যাবে না যাবে, কী অনুভূত হব না হবে তার সবই নির্ভর করে মস্তিষ্কের একগুচ্ছ বিক্রিয়ার উপর। চলচ্চিত্রে যেমন দেখানো হয় গাড়ি চালাতে না পারলে মস্তিষ্কে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা ইন্সটল করা হয় অনেকটা এমন সম্ভাবনার ইঙ্গিতই যেন দিচ্ছে। ভাবা যায় এই পদ্ধতি কতটা বিপ্লব নিয়ে আসতে পারে?

মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করার কয়েকদিন পরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদেরকে অনেকগুলো রঙের নড়াচড়া দেখতে দেয়া হয় এবং রঙগুলো সনাক্ত করতে বলা হয়। এখানেও দেখা যায় তারা কালো রঙকে লাল হিসেবে দেখছে। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়া মস্তিষ্কে কিছু সময়ের জন্য স্থায়ী হয়েছে। গবেষকরা দেখতে পান প্রবেশ করানো এই স্মৃতি বা অভিজ্ঞতা ৫ মাস পর্যন্ত স্থায়ী থাকতে পারে।

তবে এই পদ্ধতির অনেক নেতিবাচক সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। ভুলভাবে ব্যবহার করলে এটি দিয়ে মানবজাতির জন্য অনেক ক্ষতিকর কিছু বয়ে নিয়ে আসতে পারে। তবে আমরা আশা করতে পারি এই প্রযুক্তি শুধুমাত্র মানুষের উপকারের জন্যই চিকিৎসাবিজ্ঞান সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে।

2 comments:

  1. ধণ্যবাদ ভাই।ভাই আমি আপনাকে আমর ব্লগের লেখক হিসেবে এড করতে চাই ।এই ফ্রমটা http://www.bdtipstech.com/p/sign-up.html পুরন করে দিলেই আমি আপনাকে ইনভাইটেশন পাঠাবো।please vai.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওকে, তাহলে একটা ডিল হয়ে যাক। ইচ্ছুক থাকলে এই সাইটের ফেচবুক পেজে ম্যাসেজ করুন।

      Delete

Powered by Blogger.